মাইকেলের বঙ্গভাষা বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক সনেট, বাংলার প্রথম চর্তুদশপদী কবিতা। চতুর্দশপদী কবিতা লিখতে গিয়ে মধুসূদন কবি পেত্রার্ক এবং মিল্টনের কলাকৃতি অনুসরণ করেছিলেন। সনেট বা এই চতুর্দশপদী কবিতার কিছু নির্দ্দিষ্ট নিয়মকানুন আছে। কবিরা এ নিয়মের ব্যত্যয়ও ঘটিয়েছেন। সচেতন পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়েই কাব্য প্রয়াসের এ বিধিবদ্ধতা ভেঙ্গে চুরমার করেছেন। বাংলা সনেটেও ছন্দের বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন এনেছেন কেউ কেউ । পঙ্ক্তি বিন্যাসে এনেছেন নতুনত্ব। কবিতা পরিবর্তিত হয়ে নানাভাবে উপস্থাপিত হয়েছে পাঠকের কাছে। উপস্থাপনের এ পরীক্ষা নিরীক্ষা একটি চলমান প্রক্রিয়া ।
কবি রাজুব ভৌমিক শুরুতেই তাঁর চতুর্দশপদী নিয়ে ব্যাখ্যার অবতারণা করেছেন। এ ব্যখ্যার মধ্য দিয়ে কাব্য প্রয়াসের এক বিধিবদ্ধতাকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। কবিতাকে তো অনেক সময়ই কোন সংজ্ঞায় ধারণ করা যায় না, কারণ ভাব আর হৃদয় কাতরতা সব সংজ্ঞাকে চুরমার করে বেরিয়ে আসে। মধুকবি সনেট লিখেছিলেন ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে বসে। এর উত্তরাধিকার হিসেবে কবি রাজুব ভৌমিক ইস্ট রিভার বা হাডসন পারের কোলাহলময় নগরী থেকে তাঁর হৃদকাতরতাকে উপস্থাপনা করেছেন 'স্বতন্ত্র চতুর্দশপদী কবিতাবলী'তে। কবিতার বিষয়বস্তুতে কবি উপস্থাপনার ভিন্ন কলাকৌশল আরোপ করার প্রয়াস পেয়েছেন। চেষ্টা করেছেন ভাবকে ব্যঙ্ময় করে তুলবার। প্রেম- প্রকৃতি থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ সহ নানা বিষয়কে উপজীব্য করে রচিত হয়েছে তাঁর এ গ্রন্থের চতুর্দশপদীগুলো। এইসব নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাপিত জীবনের কাব্যময় উপস্থাপনা কতটা পাওয়া যাবে রাজুব ভৌমিকের 'স্বতন্ত্র চতুর্দশপদী কবিতাবলী' কবিতা গ্রন্থে তার বিচার তাঁর পাঠকেরাই করবেন। কারণ কবিতার রস বিতরণের জন্য যেমন কবিকে প্রস্তুতি নিতে হয়, রস আস্বাদনের জন্য কাব্যরসিকেরও প্রস্তুতি অনিবার্য হয়ে ওঠে। এমন প্রস্তুত কাব্য বোদ্ধাদের কাছে রাজুব ভৌমিকের 'স্বতন্ত্র চতুর্দশপদী কবিতাবলী' প্রশ্রয় পাবে বা আদৃত হবে কিনা তাকে কালের হাতেই ছেড়ে দিতে হবে আমাদের।